শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:২৯ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
মালয়েশিয়ায় অভিবাসন : যেভাবে করতে হবে নিবন্ধন

মালয়েশিয়ায় অভিবাসন : যেভাবে করতে হবে নিবন্ধন

স্বদেশ ডেস্ক:

প্রায় চার বছর বন্ধ থাকার পর মালয়েশিয়ায় আবারো বাংলাদেশের কর্মী প্রেরণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সোমবার আগ্রহী শ্রমিকদের নিবন্ধন শুরু হয়েছে।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো বিএমইটি’র মহাপরিচালক মোহাম্মদ শহিদুল আলম বিবিসিকে জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ায় কাজে যেতে ইচ্ছুক এবং ওই দেশের চাকরিদাতা কর্তৃক বাছাই হতে হলে সকল কর্মীকে বিএমইটি’র ডেটাবেজে অন্তর্ভুক্ত হতে হবে তেমন ব্যবস্থা এবার করা হয়েছে।

যেভাবে নিবন্ধন করা যাবে
মোহাম্মদ শহিদুল আলম জানিয়েছেন, দেশব্যাপী বিভিন্ন জেলায় বিএমইটি’র ৪২ টি কার্যালয় এবং ১১টি সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সরাসরি উপস্থিত হয়ে নিবন্ধন করা যাবে।

সেক্ষেত্রে সাথে করে কর্মীর পাসপোর্ট, পাসপোর্ট সাইজের ছবি, নিজের মোবাইল নম্বর, যদি ইমেইল তাহলে সেটি, যদি কোন দক্ষতা সনদ থাকে সেটি নিয়ে যেতে হবে।

কেন্দ্রে গিয়ে নিবন্ধন করলে আঙুলের ছাপ নেয়া হবে।

এসব কেন্দ্রের কর্মীরা আগ্রহী শ্রমিকদের তথ্য নিবন্ধন পোর্টালে সংযুক্ত করে নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করবেন।

এছাড়া সরকার কর্তৃক অনুমোদিত ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপ ব্যবহার করেও নিবন্ধন করা যাবে।

অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করলে ২০০ টাকার সঙ্গে অতিরিক্ত ১০০ টাকা ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপের সার্ভিস চার্জ হিসেবে পরিশোধ করতে হবে।
দক্ষতা সনদ ছাড়াও ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সী যে কেউ নিবন্ধন করতে পারবেন।

কর্মীর একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি হবে।

দুই বছরের জন্য নিবন্ধনের কার্যকারিতা থাকবে।

যে সাতটি দেশে এখন বাংলাদেশী কর্মীরা সবচেয়ে বেশি যায়
এই সময়কালে আগ্রহী কর্মী নিজের সম্পর্কে তথ্য আপডেট ও এডিট করতে পারবেন।

নতুন কোনো ডিগ্রি, প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা অর্জন করলে ওই বিষয়ক সার্টিফিকেট আপলোড করতে পারবেন।

যারা আগেই বিদেশে যাওয়ার জন্য বিএমইটিতে নিবন্ধিত রয়েছেন তাদের নতুন করে নিবন্ধনের প্রয়োজন নেই।

তবে তারাও তথ্য আপডেট করতে পারবেন।

নিবন্ধন সম্পন্ন হলে কর্মীর ফোন নম্বরে একটি বার্তা যাবে।

নিবন্ধনের পর যেভাবে নিয়োগ হবে
বিএমইটি থেকে রবিবার প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যে সকল কর্মীর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ইন্সটিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি অথবা অন্য কোনো বৈধ কারিগরি প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো ধরনের দক্ষতার প্রশিক্ষণ রয়েছে তারা ওই প্রশিক্ষণের সনদ নিবন্ধনের সময় আপলোড করলে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন।

গত বছর ডিসেম্বরে যখন সমঝোতা স্মারক সই হয় তখন তাতেও কিছু যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেয়া হয়।

এর মধ্যে রয়েছে নূন্যতম ইংরেজির জ্ঞান। মালয় ভাষার জ্ঞান বাড়তি যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হবে।

কিন্তু মালয় ভাষার জ্ঞান জানা না থাকলে তাকে অযোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হবে না।

মূলত কৃষি, নির্মাণ, খনি, গৃহকর্ম, বাগান, পরিচ্ছন্নতা কর্মী এসব খাতে কর্মী নিতে চায় মালয়েশিয়া।

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শ্রমিক সঙ্কট কি বাংলাদেশের জন্য সুযোগ?
মোহাম্মদ শহিদুল আলম বলছেন, কোন খাতে কাজ করতে চান কর্মীকে নিবন্ধনে তা উল্লেখ করতে হবে।

নিবন্ধনে যে তথ্য থাকবে তা এজেন্সি ও মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তাও দেখতে পাবেন।

আলম বলেন, ‘বিভিন্ন খাতের নিয়োগকর্তা নিবন্ধিত কর্মীদের কেমন যোগ্যতা, বয়স এমনকি ছবিতে চেহারা দেখে সেই অনুযায়ী তাদের কেমন কর্মী দরকার, কত দরকার তা চেয়ে পাঠালে বিএমইটি যে ধরনের পদ চাওয়া হয়েছে, যোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে থেকে তার চেয়ে হয়ত দ্বিগুণ নাম পাঠাবে হবে রিক্রুটিং এজেন্সির কাছে।’

তিনি বলেন, ‘তারা কর্মী বাছাই করে ওই কাজের জন্য যা যা করতে হয়, প্রশিক্ষণ, মেডিকেল পরীক্ষা করাবেন। যারা বাদ পড়বেন তাদের নাম আবার নিবন্ধিত তালিকায় ফেরত যাবে।’

একবার নিয়োগ চূড়ান্ত হয়ে গেলে ভিসার আবেদন পাঠাবে এজেন্সি। মালয়েশিয়া থেকে নিয়োগদাতা বিমান টিকেট পাঠাবেন।

তবে বাংলাদেশ অংশের স্বাস্থ্য পরীক্ষার খরচ কর্মীকে বহন করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর অনুমোদিত মেডিকেল সেন্টার যারা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত হবেন, মালয়েশিয়া সরকার যদি সেগুলো নির্বাচন করে শুধুমাত্র তারাই মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের মেডিকেল পরীক্ষা করতে পারবেন।

মালয়েশিয়া পৌঁছানোর পর বাংলাদেশী কর্মীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার খরচ, ইনস্যুরেন্স-সংক্রান্ত খরচ, মানসম্মত আবাসন, বিমা, চিকিৎসা ও কল্যাণ ইত্যাদি সেখানকার নিয়োগকর্তা বা কোম্পানি বহন করবে।

এক এক খাতের বেতন এক এক রকম।

আলমের ভাষায়, ‘এই নিবন্ধন প্রক্রিয়া আসলে সিভি আপলোড করে রাখার মতো। যা বিএমইটি, এজেন্সি, মালয়েশিয়ায় নিয়োগদাতা কোম্পানি সবাই দেখতে পাবেন। কর্মী যখন একবার বুঝবেন যে কোন ধরনের দক্ষতা থাকলে অগ্রাধিকার পাওয়া যায় তখন সে নিজেই প্রশিক্ষণ নেবে। কয়দিন পরে ক্লিনারের কাজেও নানা মেশিন ব্যাবহারের দক্ষতা লাগবে। না হলে কেউ নিয়োগ পাবে না।’

যেভাবে আটকে ছিল কর্মী প্রেরণ
বাংলাদেশের বৈদেশিক শ্রমবাজার হিসেবে মালয়েশিয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। দুর্নীতি আর অনিয়মের অভিযোগ তুলে বাংলাদেশ থেকে দুবার কর্মী নেয়া বন্ধ করে মালয়েশিয়া। সর্বশেষ ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়া বন্ধ রয়েছে।

গত বছর ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশের সাথে মালয়েশিয়ার সরকার কর্মী প্রেরণ বিষয়ক একটি সমঝোতা স্বারক সই করে। তবে তারপরও কর্মী নিয়োগ বন্ধ ছিল।

কারণ মালয়েশিয়ার তরফ থেকে শুধুমাত্র ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

বাংলাদেশের এজেন্সিগুলো এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে। বাংলাদেশের সরকারও বিষয়টি নিয়ে দ্বিমত পোষণ করে।

মহামারিতে ফেরা প্রবাসীরা স্বল্প সুদের ঋণের খবর কেন জানেন না?
এরপর থেকে ছয় মাস যাবৎ দুই দেশের সরকারের মধ্যে শুধু চিঠি চালাচালি হয়েছে এবং যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক বারবার মালয়েশিয়ার তরফ থেকে পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।

অবশেষে চলতি জুন মাসের দুই তারিখ বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ এবং মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী এম সারাভানানের উপস্থিতিতে ঢাকায় দুই দেশের একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে বিষয়টির এক ধরনের সুরাহা হয়।

নিদিষ্ট সংখ্যায় এজেন্সির উল্লেখ না থাকলেও মালয়েশিয়া শুধুমাত্র তার পছন্দমতো এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নেবে সেই সিদ্ধান্ত হয়।

তবে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি বলছে যে ১২টি দেশ থেকে মালয়েশিয়া কর্মী নিয়ে থাকে তাদের কোনোটির ক্ষেত্রেই রিক্রুটিং এজেন্সি নির্বাচনের বিষয়টি এমন নয় যেমনটা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে চাওয়া হচ্ছে।
সূত্র : বিবিসি

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877